ফেসবুক মার্কেটিং কি? কেন আর কিভাবে করবেন?

ফেসবুক এখন ডিজিটাল বিজ্ঞাপনের দুনিয়ায় সবার উপরে। ফেসবুকের মাধ্যমে কোনো ব্যবসা খুব সহজেই তাদের টার্গেট কাস্টমারের কাছে পৌঁছাতে পারে। কারণ এখন প্রায় সবাই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিও, বিশেষ করে ছোট ছোট ভিডিও দেখতে বেশি পছন্দ করে। 

Meta অনুযায়ী, ফেসবুকে সময় ব্যয়ের বড় অংশ এখন ভিডিওতে (প্রায় ৬০%) এবং এই বৃদ্ধিতে Reels বড় ভূমিকা রাখছে; লাইভ ভিডিও সাধারণ ভিডিওর তুলনায় প্রায় ৩ গুণ বেশি সময় দেখা হয়। এটা ব্যবসার জন্য দারুণ সুযোগ, কারণ এতে সরাসরি গ্রাহকের সাথে কথা বলা আর সম্পর্ক গড়ার সুযোগ মেলে। এখন ফেসবুক মার্কেটিং শুধু বিজ্ঞাপন দেওয়ার জায়গা না, বরং ব্যবসা বৃদ্ধির জন্য এক বড় হাতিয়ার হয়ে গেছে। সঠিকভাবে ফেসবুক-কে ব্যবসায় ব্যবহার করতে পারলে ব্যবসা অনেক দ্রুত এগিয়ে যেতে পারে।

ফেসবুক মার্কেটিং কি?

ফেসবুক মার্কেটিং কি?

ফেসবুক মার্কেটিং হলো ফেসবুক প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে পণ্য, সেবা বা ব্র্যান্ডের প্রচার ও বিক্রয় বৃদ্ধির একটি প্রক্রিয়া। এটি ফ্রি পোস্ট, ছবি, ভিডিও, ইভেন্ট শেয়ার করার মাধ্যমে হতে পারে অথবা পেইড বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আরও বেশি গ্রাহকের কাছে পৌঁছানো যায়।

ফেসবুকের বিজ্ঞাপন ব্যবস্থা এখন বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী অনলাইন অ্যাড প্ল্যাটফর্ম। উদাহরণস্বরূপ, Statista এর তথ্য অনুযায়ী ২০২৪ সালে বিশ্বব্যাপী ফেসবুক অ্যাড রেভিনিউ ১২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি হয়েছে। এর কারণ হলো এর উন্নত টার্গেটিং সিস্টেম, যা বয়স, লিঙ্গ, অবস্থান, আগ্রহ এমনকি আচরণের ভিত্তিতেও বিজ্ঞাপন দেখাতে পারে।

এটি শুধু বড় কোম্পানির জন্য নয়, ছোট ব্যবসা থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত উদ্যোগও ফেসবুক মার্কেটিং ব্যবহার করে দ্রুত অডিয়েন্স তৈরি করতে পারে। স্থানীয় দোকান, অনলাইন শপ, ফ্রিল্যান্সার, কনটেন্ট ক্রিয়েটর—সবাই এর মাধ্যমে সুবিধা পেতে পারে।

ফেসবুক মার্কেটিংয়ের প্রধান ধরনগুলো

ফেসবুক মার্কেটিংয়ের প্রধান ধরনগুলো

ফেসবুক মার্কেটিং সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে। এই দুই পদ্ধতির আলাদা সুবিধা ও সীমাবদ্ধতা রয়েছে, এবং ব্যবসার ধরন অনুযায়ী এক বা দুই ধরনেরই ব্যবহার করা যায়।

১. ফ্রি বা অর্গানিক ফেসবুক মার্কেটিং

২. পেইড ফেসবুক মার্কেটিং

১. ফ্রি বা অর্গানিক ফেসবুক মার্কেটিং

অর্গানিক ফেসবুক মার্কেটিং মানে হলো কোনো টাকা খরচ না করে কনটেন্ট শেয়ার করে গ্রাহকের কাছে পৌঁছানো। এটি হতে পারে নিয়মিত পোস্ট, ছবি, ভিডিও, লাইভ, স্টোরি অথবা ফেসবুক গ্রুপে অংশগ্রহণের মাধ্যমে।

এর বড় সুবিধা হলো খরচ নেই, তবে সীমাবদ্ধতা হলো অর্গানিক রিচ বা পৌঁছানো সীমিত। ফেসবুকের অ্যালগরিদম এখন ব্যবসায়িক পেজের অর্গানিক পোস্ট খুব কম ব্যবহারকারীর কাছে পৌঁছে দেয় গড়ে ৫% এর কম। তাই অর্গানিক মার্কেটিং-এ সফল হতে হলে নিয়মিত, মানসম্মত ও আকর্ষণীয় কনটেন্ট দিতে হবে এবং ফলোয়ারদের সাথে ইন্টারঅ্যাকশন বজায় রাখতে হবে।

২. পেইড ফেসবুক মার্কেটিং

পেইড ফেসবুক মার্কেটিং হলো ফেসবুকের অ্যাড প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে নির্দিষ্ট অডিয়েন্সের কাছে বিজ্ঞাপন পৌঁছানো। এটি পোস্ট বুস্ট, ভিডিও অ্যাড, ক্যারোসেল অ্যাড, লিড অ্যাডসহ বিভিন্ন ফরম্যাটে করা যায়।

পেইড বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আপনি আপনার পণ্য বা সেবা এমন ব্যক্তিদের কাছে পৌঁছাতে পারবেন যারা আপনার ব্যবসার সাথে সম্পর্কিত এবং ক্রেতা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনি ঢাকায় একটি রেস্টুরেন্ট চালান, আপনি শুধু ঢাকার মানুষের কাছে বিজ্ঞাপন দেখাতে পারবেন। এর ফলে খরচ কমে এবং ফলাফল বাড়ে।

Meta এর ডেটা অনুযায়ী, সঠিকভাবে টার্গেট করা ফেসবুক বিজ্ঞাপন কনভারশন রেট গড়ে ৯% এর বেশি হতে পারে, যা অনেক অন্য প্ল্যাটফর্মের তুলনায় ভালো।

ফেসবুক মার্কেটিংয়ের ধাপ সমূহ

ফেসবুক মার্কেটিংয়ের ধাপ সমূহ

ফেসবুক মার্কেটিং সফলভাবে করার জন্য একটি ধাপে ধাপে পরিকল্পনা প্রয়োজন। সঠিকভাবে প্রতিটি ধাপ অনুসরণ করলে আপনি আপনার টার্গেটেড অডিয়েন্সের কাছে পৌঁছাতে এবং কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পেতে পারবেন।


১। টার্গেট ঠিক করা

২। টার্গেট অডিয়েন্স সিলেকশন

৩। কন্টেন্ট তৈরির পরিকল্পনা

৪। ভালো কন্টেন্ট লেখার পদ্ধতি

৫। অর্গানিক মার্কেটিং চালানো

৬। পেইড অ্যাড ক্যাম্পেইন চালানো

৭। রেজাল্ট মনিটরিং

১। টার্গেট ঠিক করা

যেকোনো মার্কেটিং ক্যাম্পেইনের প্রথম ধাপ হলো পরিষ্কারভাবে লক্ষ্য নির্ধারণ করা। আপনি কি বিক্রি বাড়াতে চান, ব্র্যান্ড সচেতনতা গড়তে চান, নাকি ওয়েবসাইট ভিজিট বাড়াতে চান এটি আগে ঠিক করতে হবে।

টার্গেট সুস্পষ্ট না থাকলে বিজ্ঞাপনের বার্তা, ভিজ্যুয়াল এবং টার্গেটিং অস্পষ্ট হয়ে যায়। উদাহরণস্বরূপ, Meta Ads Manager-এ প্রথমেই আপনাকে ক্যাম্পেইনের উদ্দেশ্য বেছে নিতে হয় (Awareness, Consideration, অথবা Conversions)। একটি গবেষণা (HubSpot, 2024) অনুযায়ী, স্পষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করা ব্র্যান্ডগুলো গড়ে ৩১% বেশি কনভারশন পায়।

২। টার্গেট অডিয়েন্স সিলেকশন

টার্গেট অডিয়েন্স মানে আপনার বিজ্ঞাপন যাদের কাছে পৌঁছাবে। ফেসবুকের উন্নত Audience Targeting ফিচার বয়স, জেন্ডার, লোকেশন, আগ্রহ, এমনকি অনলাইন আচরণের উপর ভিত্তি করে নির্বাচন করতে দেয়।

সঠিক অডিয়েন্স সিলেকশন করলে আপনার বিজ্ঞাপন অপ্রাসঙ্গিক লোকের কাছে যাবে না, ফলে খরচ বাঁচবে এবং কনভারশন রেট বাড়বে। উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনি নারীদের জন্য জুয়েলারি বিক্রি করেন, তবে ২০-৪০ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে আগ্রহভিত্তিক টার্গেট করলে বিজ্ঞাপন বেশি কার্যকর হয়। Facebook Business Insights বলছে, প্রাসঙ্গিক অডিয়েন্সে বিজ্ঞাপন দিলে ROI গড়ে ৫০% পর্যন্ত বাড়তে পারে।

৩। কন্টেন্ট তৈরির পরিকল্পনা

কন্টেন্ট হলো ফেসবুক মার্কেটিংয়ের প্রাণ। এখানে পোস্ট, ছবি, ভিডিও, লাইভ, স্টোরি সব কিছুই কন্টেন্টের অংশ। পরিকল্পনা ছাড়া কন্টেন্ট দিলে তা ধারাবাহিকতা হারায় এবং রিচ কমে যায়।

একটি ভালো কন্টেন্ট ক্যালেন্ডার থাকলে আপনি নিয়মিত ও প্রাসঙ্গিক পোস্ট দিতে পারবেন।

উদাহরণস্বরূপ, মাসে অন্তত ৮–১২টি মানসম্মত পোস্ট দেওয়ার লক্ষ্য রাখুন, যার মধ্যে কিছু হবে ইনফরমেটিভ, কিছু প্রোমোশনাল, আর কিছু এঙ্গেজমেন্ট বাড়ানোর জন্য। Buffer এর ডেটা অনুযায়ী, নিয়মিত কন্টেন্ট শিডিউল অনুসরণ করা ব্র্যান্ডের এঙ্গেজমেন্ট গড়ে ২-৩ গুণ বাড়ায়।

৪। ভালো কন্টেন্ট লেখার পদ্ধতি

ভালো কন্টেন্ট মানে শুধু সুন্দর লেখা নয়, বরং স্পষ্ট বার্তা, ভিজ্যুয়াল আকর্ষণ এবং কার্যকর কল-টু-অ্যাকশন (CTA) থাকা। আপনার পোস্টের প্রথম ২ লাইনে মূল বিষয় তুলে ধরতে হবে যাতে স্ক্রল থামিয়ে মানুষ পড়তে আগ্রহী হয়।

ছবি বা ভিডিওতে অবশ্যই ব্র্যান্ডিং, রঙের সামঞ্জস্য এবং হাই রেজোলিউশন ব্যবহার করতে হবে। Social Media Examiner এর রিপোর্ট অনুযায়ী, ফেসবুক পোস্টে উচ্চমানের ছবি ব্যবহার করলে এঙ্গেজমেন্ট গড়ে ৮৭% বাড়ে।

৫। অর্গানিক মার্কেটিং চালানো

অর্গানিক মার্কেটিং হলো ফ্রি কন্টেন্টের মাধ্যমে মানুষের কাছে পৌঁছানো। এর জন্য দরকার নিয়মিত পোস্টিং, ফলোয়ারদের সাথে কমেন্ট ও মেসেজে ইন্টারঅ্যাকশন এবং গ্রুপে অংশগ্রহণ।

অর্গানিক রিচ কম হলেও এটি দীর্ঘমেয়াদে ব্র্যান্ডের বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি করে। উদাহরণস্বরূপ, Coca-Cola তাদের ফেসবুক পেজে ৮০% পোস্ট অর্গানিক রাখে, যাতে ফলোয়ারদের সাথে প্রকৃত সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

৬। পেইড অ্যাড ক্যাম্পেইন চালানো

পেইড অ্যাড ক্যাম্পেইন হলো নির্দিষ্ট বাজেট দিয়ে বিজ্ঞাপন চালানো। এর জন্য Meta Ads Manager-এ গিয়ে অ্যাড ফরম্যাট, বাজেট, সময়কাল এবং টার্গেট অডিয়েন্স সেট করতে হয়।

একটি গবেষণা (WordStream, 2024) অনুযায়ী, ফেসবুক অ্যাডের গড় ক্লিক-থ্রু রেট (CTR) ০.৯%, তবে সঠিকভাবে টার্গেট করা বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে এটি ৩% পর্যন্ত যেতে পারে। তাই বিজ্ঞাপন দেওয়ার আগে ডেমোগ্রাফিক ও অডিয়েন্স ইন্টারেস্ট ভালোভাবে রিসার্চ করা জরুরি।

৭। রেজাল্ট মনিটরিং

বিজ্ঞাপন বা কন্টেন্টের ফলাফল না মাপলে উন্নতি সম্ভব নয়। ফেসবুক Insights এবং Ads Manager-এর মাধ্যমে আপনি রিচ, এঙ্গেজমেন্ট, ক্লিক এবং কনভারশন ডেটা দেখতে পাবেন।

ডেটা বিশ্লেষণ করে বুঝতে হবে কোন পোস্ট বা বিজ্ঞাপন ভালো পারফর্ম করছে এবং কোনটিতে পরিবর্তন দরকার। উদাহরণস্বরূপ, A/B টেস্ট চালিয়ে আপনি কোন ক্রিয়েটিভ, হেডলাইন বা অডিয়েন্স বেশি রেসপন্স দিচ্ছে তা বের করতে পারবেন।

ফেসবুক মার্কেটিং থেকে কিভাবে ব্যবসা করবেন

ফেসবুক মার্কেটিং থেকে কিভাবে ব্যবসা করবেন

ফেসবুক মার্কেটিং শুধু ব্র্যান্ড সচেতনতা বা ফলোয়ার বাড়ানোর জন্য নয়, বরং সরাসরি আয় করারও অন্যতম কার্যকর উপায়। সঠিক কৌশল এবং পরিকল্পনা মেনে চললে এটি ছোট থেকে বড় সব ব্যবসার জন্য লাভজনক হতে পারে।

প্রোডাক্ট বিক্রি আর সার্ভিস প্রচার করে

ফেসবুক পেজ বা শপের মাধ্যমে সরাসরি পণ্য বিক্রি এবং সেবা প্রচার করাই ফেসবুক মার্কেটিং থেকে আয় করার সবচেয়ে প্রচলিত উপায়। এটি ছোট স্থানীয় ব্যবসা থেকে শুরু করে ই-কমার্স স্টোর সব ক্ষেত্রেই কাজ করে।

Facebook Shops ফিচারের মাধ্যমে আপনি আপনার পণ্য লিস্ট করতে পারেন, দাম দিতে পারেন এবং গ্রাহককে সরাসরি ইনবক্সে অর্ডার করতে দিতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশে অনেক অনলাইন বুটিক এবং হোমমেড ফুড ব্যবসা শুধুমাত্র ফেসবুক পেজ দিয়েই পুরো বিক্রি পরিচালনা করে।

Statista এর তথ্য অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়ায় সোশ্যাল মিডিয়া কমার্সের বাজার ২০২৪ সালে প্রায় ২৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে ফেসবুকই সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত প্ল্যাটফর্ম। পণ্য ছাড়াও গ্রাফিক ডিজাইন, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, অনলাইন ক্লাস এসব সেবাও এখানে প্রচার করে আয় করা যায়।

ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং আর ব্র্যান্ডের সাথে কাজ করে

ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং হলো ফেসবুকে আপনার ফলোয়ার এবং কন্টেন্টের জনপ্রিয়তাকে ব্যবহার করে ব্র্যান্ডের পণ্য বা সেবা প্রচার করে পারিশ্রমিক পাওয়া। ব্র্যান্ডগুলো এমন ইনফ্লুয়েন্সার খোঁজে যারা তাদের টার্গেট অডিয়েন্সের সাথে সম্পর্কিত।

উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনার ফলোয়ারদের বেশিরভাগই ১৮–২৫ বছর বয়সী এবং ফ্যাশনে আগ্রহী হয়, তাহলে পোশাক বা কসমেটিক ব্র্যান্ড আপনার সাথে কাজ করতে আগ্রহী হবে। Influencer Marketing Hub-এর রিপোর্ট বলছে, ২০২৪ সালে ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং ইন্ডাস্ট্রি ২১ বিলিয়ন ডলারের বেশি হবে, এবং ফেসবুক এখনও শীর্ষ প্ল্যাটফর্মগুলোর একটি।

বাংলাদেশে অনেক ইউটিউবার এবং কনটেন্ট ক্রিয়েটর ফেসবুকেও বড় অডিয়েন্স তৈরি করে সরাসরি ব্র্যান্ড থেকে স্পনসরশিপ পাচ্ছেন। এই ধরনের কাজের জন্য সাধারণত প্রতিটি পোস্ট বা ভিডিওর জন্য নির্দিষ্ট ফি নির্ধারিত থাকে, যা আপনার অডিয়েন্স সাইজ এবং এঙ্গেজমেন্ট রেটের উপর নির্ভর করে।

ভিডিও কন্টেন্ট দিয়ে আয় করে

ভিডিও কন্টেন্ট এখন ফেসবুকে সবচেয়ে বেশি এঙ্গেজমেন্ট পাওয়া ফরম্যাট। ফেসবুক Creator Studio এর মাধ্যমে মনিটাইজেশন চালু করে ভিডিও থেকে সরাসরি আয় করা যায়। এর মধ্যে ইন-স্ট্রিম অ্যাড, ব্র্যান্ডেড কন্টেন্ট এবং ফ্যান সাবস্ক্রিপশন রয়েছে।

Meta এর ডেটা অনুযায়ী, ইন-স্ট্রিম অ্যাড ভিডিও কনটেন্ট নির্মাতাদের জন্য গড়ে প্রতি হাজার ভিউতে ৩-৫ ডলার আয় করতে সহায়তা করে। তবে এর জন্য আপনাকে নির্দিষ্ট যোগ্যতা পূরণ করতে হবে যেমন গত ৬০ দিনে অন্তত ৬ লক্ষ মিনিট ওয়াচ টাইম এবং ৫টি অ্যাক্টিভ ভিডিও থাকতে হবে।

বাংলাদেশে অনেক কনটেন্ট ক্রিয়েটর ফেসবুক ভিডিও মনিটাইজেশনের মাধ্যমে মাসে ৫০,০০০ টাকা বা তারও বেশি আয় করছেন। বিশেষ করে বিনোদন, শিক্ষা, রেসিপি এবং টেক রিভিউ ক্যাটেগরির ভিডিও এখানে জনপ্রিয়।

কিভাবে ফেসবুক মার্কেটিং পরিচালনা করবেন

ফেসবুক মার্কেটিং সঠিকভাবে পরিচালনা করতে হলে স্পষ্ট পরিকল্পনা, টার্গেট অডিয়েন্স নির্ধারণ এবং সঠিক কন্টেন্ট কৌশল তৈরি করা জরুরি।

১. প্রথম ধাপ হলো ব্যবসার লক্ষ্য ঠিক করা, আপনি কি ব্র্যান্ড সচেতনতা বাড়াতে চান, লিড জেনারেট করতে চান, নাকি বিক্রি বৃদ্ধি করতে চান। লক্ষ্য পরিষ্কার থাকলে কন্টেন্ট তৈরির দিকনির্দেশনা স্পষ্ট হয়।

২. দ্বিতীয় ধাপ হলো সঠিক অডিয়েন্স টার্গেটিং। ফেসবুকের অডিয়েন্স ইনসাইটস ব্যবহার করে বয়স, অবস্থান, আগ্রহ এবং আচরণের ভিত্তিতে আপনার সম্ভাব্য ক্রেতাদের চিহ্নিত করুন। এটি বিজ্ঞাপনের কার্যকারিতা অনেকগুণ বাড়িয়ে দেয়।

৩. তৃতীয় ধাপ হলো ক্রিয়েটিভ কন্টেন্ট তৈরি। ফেসবুকে ভিডিও, ইমেজ এবং ক্যারাসেল বিজ্ঞাপন বেশি এনগেজমেন্ট পায়। নিয়মিত পোস্টিং শিডিউল, ব্যবহারকারীর সাথে ইন্টারঅ্যাকশন এবং প্রোমোশনাল অফার কনভার্সন বাড়াতে সাহায্য করে।

৪. শেষ ধাপ হলো রেজাল্ট বিশ্লেষণ। ফেসবুকের অ্যাড ম্যানেজার ড্যাশবোর্ডে আপনি ইমপ্রেশন, ক্লিক, কনভার্সন রেটসহ নানা মেট্রিক দেখতে পাবেন। ডেটার ভিত্তিতে কৌশল পরিবর্তন করলে ফলাফল আরও উন্নত হয়।

সবশেষে বলা যায়, অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকের সময় বা দক্ষতার অভাবে তারা প্রতিটি ধাপ সঠিকভাবে অনুসরণ করতে পারে না। এই ক্ষেত্রে একটি অভিজ্ঞ ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সি হায়ার করলে পুরো কাজ অনেক সহজ হয়ে যায়। তারা স্ট্র্যাটেজি, কন্টেন্ট, বিজ্ঞাপন পরিচালনা এবং রেজাল্ট বিশ্লেষণ সবকিছু পেশাদারভাবে করে দেয়, ফলে আপনি ব্যবসার অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাজে মনোযোগ দিতে পারেন এবং একই সাথে উচ্চমানের মার্কেটিং ফলাফল সহজেই পেতে পারেন।

ফেসবুক মার্কেটিং এর ভবিষ্যত

ফেসবুক মার্কেটিং আগামী বছরগুলোতেও ব্যবসার জন্য গুরুত্বপূর্ণ থাকবে, তবে এর ধরণ এবং কৌশলে পরিবর্তন আসবে। নতুন প্রযুক্তি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং ব্যবহারকারীর আচরণের পরিবর্তন এই ভবিষ্যতকে প্রভাবিত করবে।

প্রথমত, ভিডিও কন্টেন্টের প্রভাব আরও বাড়বে। Meta ইতিমধ্যেই ফেসবুক এবং ইনস্টাগ্রাম উভয় প্ল্যাটফর্মে Reels ফিচারের প্রচার করছে। ছোট ভিডিও ফরম্যাট ব্যবহারকারীদের মনোযোগ দ্রুত আকর্ষণ করতে সক্ষম, তাই মার্কেটারদের ভিডিও-কেন্দ্রিক কৌশলে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।

বছরগ্লোবাল ফেসবুক অ্যাড রেভিনিউ (বিলিয়ন USD)ভিডিও কন্টেন্টের অংশ (%)এআই-চালিত অ্যাডপশন রেট (%)মোবাইল ব্যবহারকারীর অংশ (%)
2023113.6584581
2024 (বর্তমান)120.3625484
2025 (প্রাক্কলন)127.8686387
2026 (প্রাক্কলন)135.4737189
2027 (প্রাক্কলন)143.9787891

দ্বিতীয়ত, এআই-চালিত বিজ্ঞাপন টার্গেটিং আরও নির্ভুল হবে। বর্তমানে ফেসবুকের Advantage+ ক্যাম্পেইনগুলো মেশিন লার্নিং ব্যবহার করে সঠিক অডিয়েন্সে বিজ্ঞাপন দেখাচ্ছে। ভবিষ্যতে এটি আরও স্মার্ট হয়ে যাবে, যা বিজ্ঞাপনের কার্যকারিতা বাড়াবে এবং খরচ কমাবে।

তৃতীয়ত, প্রাইভেসি নীতি পরিবর্তনের কারণে ব্যবসাগুলোকে আরও ক্রিয়েটিভ হতে হবে। অ্যাপল ও গুগলের কুকি সীমাবদ্ধতার ফলে বিজ্ঞাপনের ডেটা ট্র্যাকিং কিছুটা সীমিত হবে, তাই ব্র্যান্ডগুলোকে ফার্স্ট-পার্টি ডেটা সংগ্রহের দিকে মনোযোগ দিতে হবে।

ফেসবুক মার্কেটিং কেবল বৃহৎ ব্র্যান্ডের জন্যই নয়, বরং স্থানীয় ও ক্ষুদ্র ব্যবসার জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী এবং একই সাথে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের নতুন নতুন সুযোগ তৈরি করছে। আপনার ব্যবসার জন্য একটি কার্যকরী ফেসবুক মার্কেটিং কৌশল তৈরি করতে, আজই একটি ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সি-র সাথে যোগাযোগ করে নিজেদেরকে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে এগিয়ে রাখতে পারেন। তাই বলা যায়, ফেসবুক মার্কেটিং শুধু বড় ব্র্যান্ড নয়, বরং স্থানীয় ব্যবসা ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্যও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে থাকবে।

Table of Contents

Related post

Would you prefer to talk to someone?